৬৭ বছরে এসএসসি পাস

শিক্ষা সংবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
১১:০৫:২৪পিএম, ২৯ নভেম্বর, ২০২২

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ ওরফে ‘কবি কালাম’ নামে ৬৭ বছর বয়সে এক ব্যক্তি এসএসসি পাস করেছেন। সোমবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে তিনি জিপিএ ২.৯৫ পেয়েছেন। কালাম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুল থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া গ্রামে। তিনি নিয়মিত কবিতা লেখেন বলে এলাকার মানুষ তাকে ‘কবি কালাম’ বলে ডাকেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। সেই হিসাবে কালামের বয়স ৬৭।

১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাদের বাড়িতে আগুন লেগে বই-খাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে, তাই কাজে মনোনিবেশ করেন। পড়াশোনা আর হয়নি। জীবিকার তাগিদে এক পর্যায়ে কালাম ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর, ঢাকায় থাকাকালে বিয়েও করেন। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। দীর্ঘ ১৮ বছর থাকেন প্রবাসে। ২০১৩ সালে ফিরে আসেন বাড়িতে। তিনি প্রায় ৮ হাজার গান, কবিতা, ছড়া ও উপন্যাস লিখেছেন। এসব লেখা সংরক্ষণের জন্য ১৭টি বই আকারে বাঁধাই করে রেখেছেন তিনি।

তার বড় ছেলে সামসুদ্দিন মৌলিভীবাজারে একটি কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক, মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করেন এবং ছোট ছেলে আনিসুর রহমান গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। কালামের লেখাপড়ার সনদ নেই। এটা তার দুঃখ। এই দুঃখ কাটাতে এই বয়সে পরীক্ষা হলে বসেন। শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই, তা সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কবি কালাম।

এই বয়সে পরীক্ষায় পাসের অনুভূতি জানতে চাইলে কালাম বলেন, খুব ভাল লাগছে। মনে হয় যুদ্ধ জয় করে বিজয়ী হলাম। পাস করাটা ছিল আমার চ্যালেঞ্জ। পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা থেকে সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। কবিতা, গান ও গল্প লেখি।খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, কালামের বৃদ্ধ বয়সে এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। কালামের বিষয়টি সবার জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।