তিলকের দুরন্ত সেঞ্চুরিতে এগিয়ে গেল ভারত
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি উপহার দিলেন তিলক ভার্মা। তার ব্যাট থেকে আসা শতরানের ইনিংসে ভর করে সেঞ্চুরিয়নে বুধবার (১৩ নভেম্বর) তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয় ১১ রানে। ২২০ রানের লক্ষ্যে নেমে ৭ উইকেটে ২০৮ পর্যন্ত যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। চার ম্যাচে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয়টিতে জিতে সমতা টেনেছিল স্বাগতিকরা। এবার ফের ২-১ এ এগিয়ে গেল ভারত।
টি-টোয়েন্টি সংস্করণে টানা দুই সেঞ্চুরির অসাধারণ কীর্তি গড়ার পর টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে যান সাঞ্জু স্যামসন। দুইবারই তার ঘাতক ইয়ানসেন। আগের ম্যাচে ইনিংসের তৃতীয় বলে বোল্ড হয়েছিলেন কিপার-ব্যাটসম্যান, এবার দ্বিতীয় বলেই তার স্টাম্প এলোমেলো করে দেন এই পেসার। তিনে নেমেই ঝড় তোলেন তিলক। চার-ছক্কায় প্রথম ওভার থেকে তোলেন ১২ রান। পরের ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে হাত খোলেন আভিশেক শর্মাও; দুইটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
পাওয়ার প্লেতে স্কোরবোর্ডে ওঠে ৭০ রান। তিলক-আভিষেকের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৫০ থেকে ১০০ ছুঁতে মাত্র ১৯ বল লাগে। নবম ওভারে কেশব মাহারাজের প্রথম বলে আভিষেকের ছক্কায় একশ স্পর্শ করে ভারত। ওই ওভারেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন আভিষেক, ২৫ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫০ রান করে। টিকতে পারেননি সূর্যকুমার যাদব। শক্ত ভিত পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়া ও রিঙ্কু সিংও। তবে তিলক পথ হারাননি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩২ বলে ফিফটি ছুঁয়ে এগিয়ে যান একই ছন্দে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে তার লাগে ১৯ বল। তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি ৫১ বলে।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরিতে ৮ চার ও ৭ ছক্কায় ১০৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তিলক। ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান তিলক, ২২ বছর ৫ দিন বয়সে। সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড ইয়াশাসভি জয়সওয়ালের, ২০২৩ সালে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এবছর রেকর্ড অষ্টমবার ২০০ এর বেশি রান করল ভারত। ২০২২ সালে সাতবার দুই শতাধিকের বেশি সংগ্রহ গড়ে আগের রেকর্ড গড়েছিল কাউন্টি দল বার্মিংহাম বিয়ার্স, পরের বছর ভারত সেটাকে স্পর্শ করেছিল এবং এবছর জাপানও সমান সাতবার এই কীর্তি গড়েছে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে প্রয়োজনীয় আক্রমণাত্মক হতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। আশা জাগিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি দুই ওপেনার। রায়ান রিকেলটনকে বোল্ড করে ২৭ রানের জুটি ভাঙেন আর্শদিপ সিং। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নেওয়া ভারুন চক্রবর্তীর বলে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন রিজা হেনড্রিকস, ১৩ বলে ২১ রান করেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে ওঠে দুই উইকেটে ৫৫ রান। এরপর রানের গতি আরও কমে যায়। ১৮ বলে দুই ছক্কায় ২৯ করে ফিরে যান অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। তেমন কিছু করতে পারেননি ট্রিস্টান স্টাবস।
ফিকে হয়ে যাওয়া আশায় কিছুটা হাওয়া দেন ক্লসেন। কিন্তু লক্ষ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারছিলেন না ডেভিড মিলার। পান্ডিয়ার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে স্বরূপে ফেরার বার্তা দেন। তবে পরের বলেই আরেকটির চেষ্টায় সীমানায় আকসার প্যাটেলের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন মিলার। এরপরই মাঠে নামেন ইয়ানসেন। ওই সময় ২৫ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৭৮ রানের। পরের ওভারেই দুটি ছক্কা হাঁকান ইয়ানসেন। ওভার থেকে আসে ১৭ রান।
তারপরও লক্ষ্য ছিল অনেক দূরের পথ। শেষ ১৮ বলে দরকার ছিল ৫৯ রানের। পান্ডিয়ার করা ১৯তম ওভারে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৬ রান নিয়ে ফিকে হয়ে যাওয়া সেই আশা নতুন করে জাগিয়ে তোলেন ইয়ানসেন। শেষ ওভারেও একটি ছক্কা হাকান তিনি। তবে তৃতীয় বলে তাকে এলবিডব্লিউয়ের সফল রিভিউ নিয়ে ফেরান আর্শদিপ। ভারতের জয়টাও বলা যায় তাকে নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৭ বলে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫৪ রান করেন ইয়ানসেন।
১৮তম ওভারে ক্লসেনকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় শীর্ষে থাকা ভুবনেশ্ব কুমারের ৯০ উইকেটকে স্পর্শ করেন আর্শদিপ। পরে ইয়ানসেনকে ফিরিয়ে দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী পেসার হয়ে যান তিনি। সিরিজ নির্ধারণী শেষ ও চতুর্থ ম্যাচ মাঠে গড়াবে আগামী শুক্রবার, জোহানেসবার্গে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২১৯/৬ (স্যামসন ০, অভিষেক ৫০, তিলক ১০৭*, সুরিয়াকুমার ১, পান্ডিয়া ১৮, রিঙ্কু ৮, রামানদিপ ১৫, আকসার ১*; ইয়ানসেন ৪-০-২৮-১, কুটসিয়া ৩-০-৫১-০, সিপামলা ৪-০-৪৫-০, সিমেলানে ৩-০-৩৪-২, মার্করাম ২-০-১৯-০, মহারাজ ৪-০-৩৬-২)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ২০৮/৭ (রিকেলটন ২০, হেনড্রিকস ২১, মার্করাম ২৯, স্টাবস ১২, ক্লসেন ৪১, মিলার ১৮, ইয়ানসেন ৫৪, কুটসিয়া ২*, সিমেলানে ৫*; আর্শদিপ ৪-০-৩৭-৩, পান্ডিয়া ৪-০-৫০-১, আকসার ৪-০-২৯-১, ভারুন ৪-০-৫৪-২, বিষ্ণই ৪-০-৩৩-০)
ফল: ভারত ১১ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ শেষে ভারত ২-১ এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: তিলক ভার্মা