দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা
চমৎকার ব্যাটিংয়ে নিজেদের মেলে ধরলেন আভিশকা ফের্নান্দো ও কুসাল মেন্ডিস। দুইজনেই উপহার দিলেন সেঞ্চুরি। তাদের রেকর্ড গড়া জুটিতে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ল শ্রীলঙ্কা। পরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। ডাম্বুলায় বুধবার (১৩ নভেম্বর) বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ লুইস ও স্টার্ন পদ্ধতিতে ৪৫ রানে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ৪৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২৪ রান করার পর বৃষ্টি নামলে ইনিংস শেষ করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। পরে কিউইদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭ ওভারে ২২১ রানের। ৯ উইকেটে ১৭৫ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার জয়ের নায়ক মেন্ডিস ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে করেন ১৪৩ রান। তার ১২৮ বলের ইনিংসটি গড়া ২ ছক্কা ও ১৭ চারে। তার আগের সেরা ছিল ১২২। লঙ্কান কিপার-ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে কুমার সাঙ্গাকারার ১৬৯ রানের পর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এখন মেন্ডিসের। তিন বছর পর ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়া আভিশকা থামেন ঠিক ১০০ রানে। চতুর্থ শতক ছোঁয়া ইনিংসে ১১৫ বলে ২টি ছক্কা ও ৯টি চার মারেন এই ওপেনার।
দ্বিতীয় উইকেটে মেন্ডিস ও আভিশকার যুগলবন্দিতে আসে ২০৬ রান। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেকোনো উইকেটে এটি লঙ্কানদের সর্বোচ্চ জুটি। আগের রেকর্ড ছিল সানাৎ জায়াসুরিয়া ও উপুল থারাঙ্গার ২০১। বৃষ্টি বাধায় দেরিতে শুরু হয় খেলা। এক বল হওয়ার পর আরেক দফা হানা দেয় বৃষ্টি। তবে তখন কমানো হয়নি ওভার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারে পাথুম নিসাঙ্কাকে হারায় লঙ্কানরা। সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে পথে রাখেন মেন্ডিস ও আভিশকা।
জ্যাকব ডাফিকে দুই চার মেরে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন মেন্ডিস। প্রথম ১৩ বলে ৪ রান করা আভিশকা অভিষিক্ত ন্যাথান স্মিথের ওভারে মারেন চার ও ছক্কা। দেখেশুনে খেলে দলের রান বাড়াতে থাকেন তারা। ৬৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মেন্ডিস। পরের ওভারে পঞ্চাশে পা রাখেন আভিশকাও, ৬০ বলে। এরপর রানের গতিতে কিছুটা দম দেন মেন্ডিস। একাদশ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি ১০২ বলে। আর আভিশকার শতক আসে ১১৪ বলে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর তিন অঙ্ক ছোঁয়া আভিশকাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ইশ সোধি।
পরের ওভারে সাদিরা সামারাউইক্রামাকে বিদায় করেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে ৩৩ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস। যেখানে অগ্রণী ছিলেন মেন্ডিসই। ক্যারিয়ারে প্রথমবার দেড়শ ছোঁয়ার পথে থাকা মেন্ডিস সাজঘরে ফেরেন ডাফিকে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়ে। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৮ বলে ৪০ রান করে ফেরেন আসালাঙ্কা।
বৃষ্টির বাগড়ায় লম্বা বিরতির পর রান তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালোই করে নিউজিল্যান্ড। উইল ইয়াং ও অভিষিক্ত টিম রবিনসনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৮৮ রান। দুই ওপেনারকে একই ওভারে বিদায় করে দেন মাহিশ থিকশানা। ৪টি চারে ৩৫ রান করে স্টাম্পড হন রবিনসন। ৮ চারে ৪৮ রান করা ইয়াং হন বোল্ড। হেনরি নিকোলস, মার্ক চ্যাপম্যান, গ্লেন ফিলিপস পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে। এরপর তাই লক্ষ্যের ধারেকাছে যেতে পারেনি কিউইরা। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্তে ৫ চারে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ব্রেসওয়েল। পাল্লেকেলেতে দুই দলের দ্বিতীয় ওয়ানডে আগামী রবিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.২ ওভারে ৩২৪/৫ (নিসাঙ্কা ১২, আভিশকা ১০০, মেন্ডিস ১৪৩, সামারাউইক্রামা ৫, আসালাঙ্কা ৪০, লিয়ানাগে ১২*; ডাফি ৮.২-০-৪১-৩, স্মিথ ৮-১-৬৬-০, স্যান্টনার ১০-০-৫৩-০, ব্রেসওয়েল ৯-০-৭৩-১, সোধি ১০-০-৬২-১, ফিলিপস ৪-০-২৩-০)
নিউ জিল্যান্ড: (লক্ষ্য ২৭ ওভারে ২২১) ২৭ ওভারে ১৭৫/৯ (ইয়াং ৪৮, রবিনসন ৩৫, নিকোলস ৬, চ্যাপম্যান ২, ফিলিপস ৯, ব্রেসওয়েল ৩৪*, হে ১০, স্যান্টনার ৯, স্মিথ ৯, সোধি ০, ডাফি ৪*; আসিথা ৫-০-২৬-০, মাদুশাঙ্কা ৪-০-৩৯-৩, থিকশানা ৬-০-৩২-২, লিয়ানাগে ১-০-৪-০, ভ্যান্ডারসে ৬-০-৪০-১, কামিন্দু ২-০-১৫-০, আসালাঙ্কা ৩-০-১৫-২)
ফল: ডাকওয়ার্থ লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কা ৪৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসাল মেন্ডিস
সিরিজ: ৩ ওয়ানডের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে লঙ্কানরা