মেসিদের সামনে আরেক ফাইনালের হাতছানি

খেলাধুলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১:২৪:১৬পিএম, ৯ জুলাই, ২০২৪

লিওনেল মেসি, ফুটবল জাদুকর। ক্যারিয়ারে সব কিছুই জয় করেছেন। কত শত জাদুকরী মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন! ভক্তরা তার পায়ে বল দেখলেই উল্লাসে মেতে ওঠেন। এই বুঝি কিছু হলো! কখনো গোল হয়। কখনো এমন এক মুহূর্তের দেখা মেলে, যার তুলনা পাওয়া কঠিন। লিওনেল মেসি গত প্রায় দুই দশক ধরে ফুটবল বিশ্বে শাসন করছেন। তার রাজদন্ড মাঝে মধ্যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হাতেও গেছে। তবে মেসি তো মেসিই। কয়েক বছর আগেও নিন্দুকেরা বলত, মেসি তো ক্লাব ফুটবলার। বিশ্বকাপ আর কোপা আমেরিকার ট্রফি যার নেই তার জন্য এমন কথা বলা দোষের কিছু ছিল না। কিন্তু সেসব বহু পেছনে ফেলে এসেছেন মেসি। ২০২১ সালে জয় করলেন কোপা আমেরিকা। পরের বছরই বিশ্বকাপ। ফুটবল দুনিয়ার রাজদন্ডটা পুরোপুরিই মেসির হাতে চলে এলো। এক লাফে তিনি চলে গেলেন পেলে-ম্যারাডোনাদের সারিতে। অনেকে বলেন, তারও ওপরে।

লিওনেল মেসির অর্জনের পাল্লা আরও একটু ভারী হতে পারে। এবারের কোপা আমেরিকা জিতলেই এক অনন্য রেকর্ড গড়বেন তিনি। কোপা আমেরিকা-বিশ্বকাপ-কোপা আমেরিকা জয়ের রেকর্ড। ইউরোপে এমন রেকর্ড আছে স্পেনের। ২০০৮ সালে ইউরো কাপ জেতা স্পেন ২০১০ সালে জয় করে বিশ্বকাপ। ২০১২ সালে ফের ইউরো কাপ জিতে এক অনন্য নজির স্থাপন করে তারা। একই রকম রেকর্ডটা কি মেসিরাও করতে পারবেন!

কাল সকালে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কানাডার মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। শেষ চারের লড়াইয়ে জিতলেই আরও একটি ফাইনাল। কানাডা এমন কোনো দল নয়, যাদের বিপক্ষে খেলতে খুব বেশি ভাবার প্রয়োজন আছে আর্জেন্টিনার। অন্তত ফিফা র‌্যাঙ্কিং তো তাই বলে। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা। কানাডার অবস্থান ৪৮ নম্বরে। অতীতে দুবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। দুবারই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ২০১০ সালে প্রীতি ম্যাচে ৫-০ গোলে জয় পেয়েছে আলবেসিলেস্তরা। চলতি কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্বে ২-০ গোলে কানাডাকে হারিয়েছে তারা। দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তারপরও দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে কোচ লিওনেল স্কালোনির। লিওনেল মেসির ইনজুরি পুরোপুরি সারেনি। মাঠে তার খেলা দেখলেই বেশ বোঝা যায়। আগের মতো ধার চোখে পড়ে না। তারপরও তিনি লিওনেল মেসি। প্রতিপক্ষ দলকে সতর্ক থাকতেই হয়।

একসময় ফাইনাল খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন লিওনেল মেসি। ২০১৬ সালে চিলির কাছে কোপা আমেরিকা ফাইনালে হেরে অভিমানে অবসরই নিয়ে নিয়েছিলেন। ভক্তরা রীতিমতো আন্দোলন করে মেসির মান ভাঙান। সেই মেসি ফুটবলে ফিরে কত কিছুই না জয় করলেন। অধরা কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপের ট্রফি জিতলেন। ফিফার বর্ষসেরা হলেন। ব্যালন ডি’অর জিতলেন। আরও একটা ফাইনাল খেলার সুযোগ তার সামনে। এ সুযোগটাও নিশ্চয়ই কাজে লাগাতে চাইবেন মেসি! কোপা আমেরিকা শুরুর আগেই আর্জেন্টাইন জাদুকর বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শিরোপা জয়।’ লক্ষ্যটা তো এমনই থাকার কথা। কয়েক বছর ধরেই দারুণ ফুটবল খেলছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিতে মুগ্ধ সতীর্থরা। তাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাতে বিশেষ কোনো বেগ পেতে হয় না তরুণ কোচ লিওনেল স্কালোনিকে।

এত কিছুর পরও কানাডার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ভাববার প্রয়োজন আছে। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা কানাডাকে হারিয়েছে। তবে সেই ম্যাচের পর কানাডার কোচ অভিযোগ করেছিলেন, প্রথমার্ধের পর বিরতিতে বাড়তি সময় নিয়ে আর্জেন্টিনা আসলে কানাডার বিপক্ষে কৌশল সাজাচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে কানাডাকে তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়তে দেননি মেসিরা। তা ছাড়া চলতি আসরে কানাডা পেরুর মতো দলকে হারিয়েছে। চিলির মতো দলের সঙ্গে ড্র করেছে। এ ফলাফল কালকের ম্যাচে আর্জেন্টিনার চিন্তা বাড়াচ্ছে। ফুটবল বিশ্লেষকদের ধারণা মেসিরা তাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে কানাডাকে সহজেই হারানো সম্ভব। তবে ম্যাচ যদি অতিরিক্ত সময় বা টাইব্রেকারে গড়ায় তা হলে কি হবে বলা মুশকিল।