লাইপজিগকে গোল বন্যায় ভাসাল ম্যান সিটি

খেলাধুলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
১১:৪২:১০এএম, ১৫ মার্চ, ২০২৩

সাম্প্রতিক সময়ে খুব বেশি গোল করতে পারছিলেন না বলে আর্লিং হলান্ডকে নিয়ে উঠছিল প্রশ্ন। সময়ের সেরা ফুটবলারদের একজন তরুণ এই তারকা ফের জ্বলে উঠতে বেশি সময় নিলেন না। এক ম্যাচেই করলেন পাঁচ গোল। দাপুটে ফুটবলে লাইপজিগকে অনায়াসে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল ম্যানচেস্টার সিটি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে ৭-০ গোলে জিতেছে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। অন্য দুই গোলদাতা কেভিন ডে ব্রুইনে ও ইলকাই গিনদোয়ান। দুই লেগ মিলিয়ে ৮-১ গোলের অগ্রগামিতায় শেষ আটে পা রাখল সিটি। প্রথম লেগ ১-১ ড্র হয়েছিল। এই ম্যাচের আগে ক্লাবের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবশেষ ৯ ম্যাচে হলান্ডের গোল ছিল কেবল ৩টি। গত গ্রীষ্মে সিটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে যেভাবে গোলের পর গোল করছিলেন তিনি, তাতে এই সংখ্যা বড্ড বেমানান লাগছিল তার নামের পাশে। এবার লাইপজিগের জালে পাঁচবার বল পাঠিয়ে ২২ বছর বয়সী ফুটবলার নাম লেখালেন বেশ কিছু রেকর্ডে।

শুরু থেকে জার্মান দলটিকে চেপে ধরে সিটি। একাদশ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় তারা। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান নাথান আকে। প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে টোকা দেন হলান্ড। তবে রুখে দেন গোলরক্ষক। কিছুক্ষণ পর ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে দুই গোল করে সিটিকে শেষ আটের পথে এগিয়ে নেন হলান্ড। ২২তম মিনিটে স্পট-কিকে প্রথম গোলটি করেন নরওয়ের ফরোয়ার্ড। বক্সে লাইপজিগের ডিফেন্ডার বেনিয়ামিন হেনরিকসের হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে রেফারি পেনাল্টি দিয়েছিলেন। রেফারি মনিটরে রিপ্লে দেখার সময় ধারাভাষ্যকার অবশ্য বলছিলেন, হয়তো পেনাল্টি হবে না। পরের গোলটি হতে পারত কেভিন ডে ব্রুইনের। বক্সের বাইরে থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের জোরাল শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল হেডে জালে পাঠান হলান্ড।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২৫ ম্যাচে হলান্ডের ৩০ নম্বর গোল এটি। প্রতিযোগিতাটিতে তার চেয়ে কম ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি আর কেউ। তিনি ভেঙে দিলেন সাবেক ডাচ ফরোয়ার্ড রুড ফন নিস্টলরয়ের (৩৪ ম্যাচ) রেকর্ড। ৩৩তম মিনিটে পোস্ট ছেড়ে বক্সের বাইরে এসে টিমো ভেরনারকে ট্যাকল করেন সিটির গোলরক্ষক এদেরসন। ফ্রি-কিকের আবেদন করেন জার্মান ফরোয়ার্ড। তবে রেফারির সাড়া মেলেনি। উল্টো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ভাগ্যের ছোঁয়ায় হ্যাটট্রিক পূর্ণ হয়ে যায় হলান্ডের। ডে ব্রুইনের কর্নারে রুবেন দিয়াসের জোরাল হেড লাগে পোস্টে। বল গোললাইনের ওপর দিয়ে চলে যায় অন্য পাশে। লাইপজিগের এক ডিফেন্ডারের ক্লিয়ারের চেষ্টায় বল হলান্ডের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রথমার্ধে একাধিক হ্যাটট্রিক করলেন হলান্ড। প্রথম জন সাবেক ইতালিয়ান ফুটবলার মার্কো সিমোনে, ১৯৯৬ সালে এসি মিলানের হয়ে ও ২০০০ সালে মোনাকোর জার্সিতে। হলান্ডের প্রথমটি ছিল তার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিষেক ম্যাচে, ২০১৯ সালে সালসবুর্কের হয়ে। প্রতিযোগিতাটির নকআউট পর্বে হ্যাটট্রিক করা সিটির প্রথম খেলোয়াড় তিনিই।

দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ান গিনদোয়ান। জ্যাক গ্রিলিশের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে ১৬ গজ দূর থেকে শটে গোলটি করেন জার্মান মিডফিল্ডার। খানিক বাদে চার মিনিটের মধ্যে আরও দুইবার জালের দেখা পান হলান্ড। প্রথমবার তার হেড গোলরক্ষক ঠেকানোর পর মানুয়েল আকনজির প্রচেষ্টাও ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপর জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন হলান্ড। পরেরটিতেও শুরুতে আকনজির প্রচেষ্টা ফেরান গোলরক্ষক। ফিরতি বল জোরাল শটে আবার জালে পাঠান হলান্ড। সিটির হয়ে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন রেকর্ড গড়লেন তিনি, ৩৯টি। ভেঙে দিলেন টমি জনসনের প্রায় শতবর্ষী রেকর্ড। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ৩৮ গোল করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন সাবেক এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। হলান্ডের কীর্তি আছে আরও। স্রেফ তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক ম্যাচে ৫ গোল করলেন তিনি।

২০১২ সালে বার্সেলোনার হয়ে বায়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে লিওনেল মেসি ও ২০১৪ সালে শাখতার দোনেৎস্কের হয়ে বাতে বরিসভের বিপক্ষে লুইস আদ্রিয়ানো এই নজির গড়েছিলেন। সিটির জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হলান্ডের ৩৯ গোল হয়ে গেল ৩৬ ম্যাচে। গোল সংখ্যা হয়তো এ দিন তার আরও বাড়তে পারত, তবে ৬৩তম মিনিটে তাকে তুলে হুলিয়ান আলভারেসকে নামান গুয়ার্দিওলা। যোগ করা সময়ে লাইপজিগের কফিনে সপ্তম পেরেক ঠুকে দেন ডে ব্রুইনে। ২৫ গজ দূর থেকে তার ডান পায়ের শটে বল ওপরের কোণা দিয়ে জালে জড়ায়। একই সময়ে মাঠে গড়ানো শেষ ষোলোর আরেক ম্যাচে পোর্তোর মাঠে গোলশূন্য ড্র করেছে ইন্টার মিলান। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জেতায় শেষ আটের টিকেট পেয়েছে ইতালিয়ান দলটি।